রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা (Errors and Limitations of Rutherford's Atomic Model In Bengali)

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি

১৯১১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড পরমাণু সংক্রান্ত বিষয় গভীর গবেষণা করে একটি পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন। রসায়ন বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক পরমাণু মডেল। এর আগে বিজ্ঞানী ডালটন বা বিজ্ঞানী থমসন পরমাণুর যেসব মডেল দিয়েছিলেন তা খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত ছিল না এবং তারা বিশেষ পরীক্ষার দ্বারা তাদের পরমাণু মডেলের গঠনগত সত্যতা যাচাই করতে পারেননি এবং সর্বসম্মুখে প্রকাশ করতে পারেননি। কিন্তু রাদারফোর্ড ছিলেন প্রথম বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানসম্মত পরমাণু মডেল তৈরি করেন।


তিনি আলফা কণা (Alpha particle) এর ওপর গবেষণা এবং তার বিখ্যাত আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার ফলাফল থেকে এই মডেল তৈরি করেন।


পরবর্তীকালে এই পরমাণু মডেলের উপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী গবেষণা করেন এবং তারা রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের কিছু ত্রুটি দেখতে পান -

আজকের এই পোস্টে আমরা রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সেই ত্রুটিগুলোকে নিয়েই আলোচনা করব এবং জানবো রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে -

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি


১) বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের তত্ত্ব অনুসারে, আধান যুক্ত / চার্জ যুক্ত যে কোন গতিশীল কণা থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে শক্তি নির্গত হয়। পরমাণুর মধ্যে থাকা অব - পারমাণবিক কণা ইলেকট্রন একটি চার্জযুক্ত গতিশীল কণা। তাই, বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্বানুযায়ী পরমাণুর ইলেকট্রন মহলে ইলেকট্রনগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে ঘোরার সময় স্বাভাবিকভাবেই তাদের থেকে শক্তি নির্গত হবে বা তারা শক্তি বিকিরণ করবে।

ধনাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে - তড়িৎ গ্রস্ত ইলেকট্রন ঘোরার সময় ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্ব অনুসারে ইলেকট্রনগুলি বিশেষ তরঙ্গ রূপে (আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে - তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ রূপে) শক্তি বিক্রম করতে থাকে।

তাই ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্ব এবং বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুযায়ী শক্তি বিকিরণ করতে করতে ইলেকট্রনের অভ্যন্তরে যে শক্তি থাকে তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। যেহেতু ইলেকট্রনগুলি ক্রমে শক্তি হারাতে থাকে তাই তারা নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে যে বৃত্তাকার (রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুযায়ী পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলি বৃত্তাকার) কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করতে থাকলে তার ব্যাসার্ধ ক্রমেই কমতে থাকবে ।

এভাবে চলতে থাকলে, খুব কম সময়ের মধ্যেই ইলেকট্রন গুলির কক্ষপথের ব্যাসার্ধ হ্রাস পাবে এবং তারা একসময় নিউক্লিয়াসের ওপরে এসে আছড়ে পড়বে। পুরো বিষয়টি ঘটতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে না। অতএব ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্ব দিয়ে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে বিচার করলে দেখা যায় রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুযায়ী পরমাণু অস্থায়ী - কিন্তু বাস্তবে তা নয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ পরমাণু স্থায়ী এবং বাহ্যিক কোন সংস্থা ব্যতীত সেই পরমাণু হঠাৎ করে অস্থায়ী / ধ্বংস হয়ে যায় না।

এই ধরনের উপর ভিত্তি করে বলা যায় রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের মাধ্যমে পরমাণু স্থায়িত্ব বর্ণনা করা যায় না বা পরমাণু স্থায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ ধারণা পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন - দিনের বেলায় আকাশকে নীল দেখায় কেন


২) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুযায়ী, নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ইলেকট্রন তারা শক্তির বিকিরণ করতে থাকে।

কিন্তু, এই ঘুরতে থাকা ইলেকট্রন নিরবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি বিকিরণ করলে যে বর্ণালী উৎপন্ন হওয়ার কথা তাও নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণালী হবে । কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। নিচের ছবি থেকে দেখতে পাওয়া যায়, হাইড্রোজেন পরমাণুর যে বর্ণালী পাওয়া যায় দৃশ্যমান আলোর পাল্লার মধ্যে টা নিরবিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন নয়। প্রকৃতপক্ষে পরমাণু থেকে যে বর্ণালী পাওয়া যায় তার রেখা বর্ণালী বিচ্ছিন্ন বর্ণালী। এটিও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের একটি ত্রুটি।

Hydrogen Spectrum
(দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে হাইড্রোজেন মৌল থেকে নির্গত বর্ণালী)

৩) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে পরমাণুর মধ্যে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের গতিবেগ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা পাওয়া যায় না।

        যদিও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার এই পরমাণু মডেলের গুরুত্ব কখনো অস্বীকার করা যায় না - কারণ এটিই ছিল রসায়নের ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক পরমাণু মডেল।এবং তারই পরমাণু মডেলের ধারণার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে এই পরমাণু মডেল টি পরিবর্তন এবং পরিমার্জন করে আধুনিক পরমাণু মডেল (নীলস বোর এর পরমাণু মডেল) প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন - GPS কি? | GPS কিভাবে কাজ করে | GPS এর পুরো নাম

Post a Comment

0 Comments