অনলাইন ক্লাসের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ
ধরা যাক আজকের এই সংলাপের দুই চরিত্র, দুই বন্ধু আকাশ এবং বিকাশ একই স্কুলে, একই শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। বহুদিন পর তারা মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তাই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। ইতিমধ্যে করোনা অতিমারির মধ্যে আকাশ এবং বিকাশ প্রত্যেকেই অনলাইনে স্কুলের ক্লাস গুলি করেছে, ক্লাস গুলি করতে গিয়ে তারা দুজনেই বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা সম্মুখীন হয়েছে। এইসব সুবিধা এবং অসুবিধা কথা নিয়েই তাদের এই নিম্নলিখিত কথোপকথন / সংলাপ।
সংলাপ:
আকাশ: অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা হলে বিকাশ, কেমন আছিস?
বিকাশ: হ্যাঁ সত্যি, প্রায় ২ বছর পর। মহামারীতে ধাক্কা কাটিয়ে এখন আগের তুলনায় নিঃসন্দেহে বেশ ভাল আছি।
আকাশ: সত্যিই, এ যেন সমগ্র মানব জাতির জীবনে এক অভিশাপ স্বরূপ।
বিকাশ: হ্যাঁ, সমগ্র মানব সমাজকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে এই অদৃষ্ট জীবাণু।
আকাশ: একইসঙ্গে আমাদের পড়াশোনাকেও। মহামারীর প্রভাবে হঠাৎ করে কেমন সব বদলে গেল রে!
বিকাশ: ঠিকই বলেছিস। অনলাইন ক্লাসই এই ২ বছরের জন্য আমাদের ভরসা ছিল।
আকাশ: প্রথাগত শ্রেণীকক্ষের বিপরীতে এ সত্যিই এক অভিনব বিষয়। তবে, সব কিছুর ভালো খারাপের মত এরও নানান দোষ ত্রুটি আছে, কিন্তু একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবনে এর গুরুত্বও এই ২ বছরে অপরিসীম ছিল।
বিকাশ: সে তো অবশ্যই। করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব যখন গৃহবন্দি হয় পরেছিলোজ তখন এই অনলাইন ক্লাসই তো আমাদেরকে পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রেখেছিল। বাড়ি বসে স্কুল করতে পাওয়া, এ কি আগে কখনও ভাবা যেত?
আকাশ: নিঃসন্দেহে এ এক অভিনব অভিজ্ঞতা। মহামারী জর্জরিত সময় অনলাইন ক্লাস যেমন ভাবে আমাদেরকে পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনলাইন ক্লাসের ফলে আমরা পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত থেকে যেমন নিজেদের পঠন-পাঠন কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে তেমনি লকডাউনে ঘরে বসে থাকা সময়গুলো বাড়ি থেকে স্কুলের স্যার-ম্যাম ও বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করে সুন্দর ভাবে অতিবাহিত হয়েছে।
বিকাশ: যেসব জিনিস তাত্ত্বিকভাবে বোঝানো কঠিন, হাতে-কলমে করে দেখতে পারলে ভালো হয় বা স্বচক্ষে দেখতে পারলে আরো ভালো করে বিষয়টি অনুধাবন করা যায় এইসব বিষয়গুলি অনলাইন ক্লাসে বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন, এর ফলে বিষয়গুলিকে আমরা আরো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।
আকাশ: সবই ঠিক কিন্তু এ সত্ত্বেও অনলাইন ক্লাসেরও বিভিন্ন কুফল রয়েছে। স্কুলে মোটামুটি ৪-৫ ঘন্টা আমরা কাটাই, এই সময়ের বেশিরভাগটাই আমরা ক্লাস করি। কিন্তু বাস্তবে এতক্ষণ ধরে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব নয়। সম্ভব হলেও কিভাবে অনলাইন ক্লাস করলে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। ভবিষ্যতেও এইসব রোগ জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। একটানা মোবাইলের দিকে বেশি ক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের ক্ষতি হচ্ছে, ক্ষীণ হয় যাচ্ছে দৃষ্টিশক্তি।
বিকাশ: তাছাড়াও একটা ব্যাপক অংশের শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল ফোন নেই, থাকলেও তাতে ইন্টারনেটের সুবিধা বর্তমান নেই। তাই, সমস্ত শিক্ষার্থীদের কে অনলাইন ক্লাস এর আওতায় আনা যাচ্ছে না। এর ফলে একাংশের ছাত্রছাত্রীরা পঠন-পাঠনের অন্যদের থেকে বেশ পিছিয়ে পড়ছে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা সাধারণ ক্লাসের মত করে ছাত্র ছাত্রীদের দিকে নজর দিতে পারছেন না। সর্বোপরি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শারীরিক তো বটেই একটা মানসিক দূরত্বও তৈরি হচ্ছে যা সত্যিই চিন্তার বিষয়।
আকাশ: তা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস যেরকম করে আমাদেরকে সাহায্য করেছে পঠন-পাঠন এগিয়ে নিয়ে যাবে তার জন্য সব কৃতিত্বই অনলাইন ক্লাস প্রাপ্য।
বিকাশ: শত দোষ-ত্রুটি থাকলেও অনলাইন ক্লাস এর গুরুত্ব আমরা কখনই অস্বীকার করতে পারব না।
0 Comments