ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কাকে বলে? এর উৎপত্তির কারণ | ভরা কটাল ও মরা কটাল

আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো - 

ভরা কোটাল / মরা কোটাল কাকে বলে? ভরা কোটাল এর উৎপত্তির কারণ। মরা কোটাল এর উৎপত্তির কারণ।

জোয়ারের প্রাবল্য অনুসারে জোয়ার দুই প্রকারের হয়।
১। ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল।
২। মরা জোয়ার বা মরা কোটাল ।

ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল :
অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে যদি পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে তাহলে যে প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার তেজ কোটাল বলে। (উল্লেখ্য কোটাল শব্দটি তামিল ভাষার শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, তামিল ভাষায় কোটাল শব্দের অর্থ হলো সমুদ্র)

ভরা কোটাল সৃষ্টি হওয়ার কারণ :
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করতে যে সময় নেয় তাকে এক চান্দ্রমাস বলে। এই চান্দ্রমাসের প্রতিটি দিনকে এক একটি তিথি বলা হয়। এইরকমই দুটি তিথি হল পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা। এই পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় পৃথিবী এবং চাঁদ এমন অবস্থানে আসে যাতে পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সর্বাধিক হয়। আবার, কখনো কখনো সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরল রেখায় আসার ফলে সূর্য এবং চাঁদ একইসঙ্গে পৃথিবীর জলরাশিকে আকর্ষণ করে। সূর্য এবং চাঁদ এর একই দিক থেকে মিলিত আকর্ষণের ফলে জোয়ারের জল সর্বাধিক ফুলে-ফেঁপে ওঠে।

পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল সৃষ্টির কারণ :
পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে। একে প্রতিযোগ অবস্থান বলা হয়। এর ফলে পৃথিবী একদিকে চাঁদের আকর্ষণ এ প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হয় এবং তার ঠিক বিপরীত দিকে সূর্যের আকর্ষণে জোয়ারের প্রাবল্য বৃদ্ধি পায় এই জোয়ারকে পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলা হয়।

অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটাল সৃষ্টির কারণ :
অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ - পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে। একে সহযোগ অবস্থান বলা হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য থাকায় উভয়ের মিলিত মহাকর্ষ শক্তি একই স্থানে কার্যকরী হয়। ফলে জোয়ারের জলরাশি সবথেকে বেশি উঁচু হয়। এই জোয়ারকে অমাবস্যার ভরা জোয়ার বা অমাবস্যার তেজ কোটাল বলা হয়। একইভাবে এই তিথিতে ভাটার জলতল সবথেকে বেশি নেমে যায়।

উল্লেখ্য, অমাবস্যা তিথির ভরা কোটাল এবং পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল এর মধ্যে অমাবস্যা তিথির ভরা কটাল এর প্রাবল্য সবথেকে বেশি হয়।

মরা জোয়ার বা মরা কোটাল : শুক্ল এবং কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে সূর্য এবং চাঁদ পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এর ফলে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের বিপরীত দিক থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, এর ফলে কম প্রাবল্যের যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে মরা কোটাল বলা হয়।

মরা কোটাল সৃষ্টি হওয়ার কারণ :
কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয় পূর্ণিমা তিথির পর থেকে এবং শুক্লপক্ষ শুরু হয় অমাবস্যা তিথির পর থেকে। উভয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ এবং সূর্য পরস্পরের সঙ্গে সমকোণে থেকে পৃথিবী কে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে। যার ফলে চাঁদের আকর্ষণ এর সৃষ্ট মুখ্য জোয়ার এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে সৃষ্ট গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য কম হয়। জোয়ারের জলতল সবচেয়ে কম ফোলে। একইভাবে ভাটার প্রাবল্য হ্রাস পায়। একে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলা হয়।

এই জোয়ারের প্রাবল্য সাধারণ জোয়ার অপেক্ষা ২০ % কম হয়।

Post a Comment

1 Comments