পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কিভাবে মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কিভাবে মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়

    যে কয়টি বিষয়ে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু নির্ধারণের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, মৌসুমী বায়ু তাদের মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, সমগ্র ভারত এবং ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ু নির্ধারণ মৌসুমী বায়ুর এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে, বলতে গেলে সমগ্র ভারতের জলবায়ু নির্ধারণ মৌসুমী বায়ুর ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কিভাবে মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়

এখন আমরা আলোচনা করব কিভাবে মৌসুমী বায়ু কিভাবে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কে প্রভাবিত করে বা পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কিভাবে মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রবাহিত হয়।

  • ঋতু বৈচিত্র সৃষ্টি এবং ঋতু পরিবর্তন:

    পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ু লক্ষণীয় প্রভাব সারাবছর ধরে দেখতে পাওয়া যায়, তা হল ঋতুবৈচিত্র্য।

    মৌসুমী বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন এর উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়। মৌসুমী বায়ু ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করার পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে এই সময়কে আমাদের রাজ্যে বর্ষাকাল বলে সূচনা করা হয়। মৌসুমী বায়ুর আগমনের সময় আমাদের রাজ্যের আবহাওয়া শীতল হয়ে পড়ে, এই সময়কে বলা হয় শীতকাল। এভাবেই মৌসুমী বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমনের ওপর নির্ভর করে আমাদের রাজ্যের প্রধান চারটি ঋতু যথা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ এবং শীত চক্রাকারে আবর্তিত হয়।

আরও পড়ুন - ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের মধ্যে পার্থক্য

  • বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ:

    মৌসুমী জলবায়ু আমাদের রাজ্যে বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে । গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি সময়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ পশ্চিম দিকে বেঁকে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু রুপে আমাদের দেশ তথা রাজ্যে প্রবেশ করে।  হিমালয় পর্বতমালা এবং মেঘালয় রাজ্যের গারো - খাসি - জয়ন্তিয়া পাহাড়ের বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এই মৌসুমী বায়ু বর্ষাকালে সারা ভারতে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়, স্বাভাবিকভাবেই  আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টিপাত হয় তা এই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই হয়।

  • আদ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল সৃষ্টি:

    আমাদের দেশ তথা আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে গ্রীষ্মকাল আদ্র হয় এবং শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়। যেহেতু গ্রীষ্মকালীন সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রবেশ করে, তাই গ্রীষ্মকাল এই জলীয় বাষ্পের প্রভাবে আর্দ্র প্রকৃতির হয়।

    আবার শীতকালে যেহেতু মৌসুমী বায়ু শুষ্ক হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রত্যাগমন করে, তাই এই বায়ুতে কোন জলীয় বাষ্প থাকে না। এজন্য ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে শীতকাল শুষ্ক হয়।

    এভাবেই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আমাদের রাজ্যে আদ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল এর সৃষ্টি হয়েছে।

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি:

    আমাদের রাজ্যে মৌসুমী বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন বেশ অনিশ্চিত। কোন কোন বছর মৌসুমী বায়ু বেশ দেরিতে প্রবেশ করে বা কম পরিমাণে প্রবেশ করে - এমত অবস্থায় সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাতের না হওয়ার জন্য আমাদের রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হয়।

    আবার আমাদের রাজ্যে কোনো কোনো বছরে মৌসুমী বায়ু বেশ তাড়াতাড়ি ঢুকে যাওয়ার কারণে বা বেশি পরিমাণে ঢুকে যাওয়ার কারণে আমাদের রাজ্যে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে (বিশেষ করে দামোদর নদী উপত্যকায়) বন্যা সৃষ্টি হয়।

  •   ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি নির্দেশ -  এই নিবন্ধে তোমাদের বোঝার জন্য বিশেষ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশ বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় বা অন্যান্য জায়গায় যেখানে তোমাদের এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে, সেখানে তোমরা সংক্ষেপে আনুমানিক ১৫০ শব্দের মধ্যে তোমাদের উত্তর লিখতে পারো।

Post a Comment

0 Comments