হিমালয় পর্বতমালা কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে?

হিমালয় পর্বতমালা কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে?

হিমালয় পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা। এটি আমাদের দেশ ভারতবর্ষের উত্তর দিকে এক বিরাট প্রাচীরের মতো অবস্থান করছে। সুবৃহৎ হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তরতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ হয়ে প্রায় নাগাল্যান্ড-মণিপুর পর্যন্ত বিস্তৃত।

হিমালয় পর্বতমালার এত বড় বিস্তৃতির জন্য স্বাভাবিকভাবেই ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের হিমালয় পর্বতমালার এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

এখন আমরা আলোচনা করব ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের হিমালয় পর্বতমালার ভূমিকা / হিমালয় পর্বতমালা কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে?

বিশেষ দ্রষ্টব্য : ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের যে কয়টি প্রাকৃতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তাদের মধ্যে হিমালয় পর্বতমালা অন্যতম।

হিমালয় পর্বতমালা কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে

হিমালয় পর্বতমালা কিভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে

১. তীব্র শীতে হাত থেকে রক্ষা:

ভারতের উত্তর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো আমাদের দেশের সীমানায় বিরাজমান। হিমালয় পর্বতমালা পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা - এর গড় উচ্চতা প্রায় ছয় হাজার মিটার। হিমালয় পর্বতমালার এই বিশাল উচ্চতার জন্য রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আশা তীব্র শীতল বায়ু হিমালয় পর্বত ভেদ করে আমাদের ভারতে এসে পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে ভারতে শীত অতটা প্রকট হয় না। এভাবেই হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর দিকে দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে রাশিয়া সাইবেরিয়া থেকে আগত তীব্র হিমেল হাওয়া কে ভারতে ঢুকতে বাধা দিয়ে আমাদেরকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করে।

২. বৃষ্টিপাত সৃষ্টি:

আমাদের দেশ ভারতে মূলত যে পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত হয় তা হল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ এই বায়ু হিমালয় পর্বতমালায় বাধা পেয়ে সারা ভারতে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। হিমালয় পর্বতমালা যদি না থাকতো তাহলে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আমাদের ভারতবর্ষে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারত না, ফলতঃ ভারতে তীব্র খরার সৃষ্টি হতো।

আরও পড়ুন - ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বত এর গুরুত্ব

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এর জন্যই মেঘালয় রাজ্যের মৌসিনরাম এরে চেরাপুঞ্জিতে সারা বছর ধরে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় (বছরে প্রায় ১১০০ মিলিমিটার)। এ কারণে  চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর আদ্রতম স্থান)

৩. শীতলতা সৃষ্টি:

হিমালয় পর্বতমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৪-৬ হাজার মিটার উঁচু। হিমালয় পর্বতমালার প্রায় ১-৩ হাজার মিটার উচ্চতায়‌ও মানুষ বাস করে। প্রতি ১ হাজার মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা গড়ে ৬.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হারে হ্রাস পায়। অতএব, প্রায় ২ হাজার মিটার উচ্চতায় উষ্ণতা গড়ে ৫-৬° সেন্টিগ্রেডে গিয়ে পৌছায় (যদি পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১৮° সেন্টিগ্রেড ধরা হয়)। তাই প্রতিবছর শীতকালে হিমালয় পর্বতমালা বেশ শীত পড়ে, এমনকি অধিক উচ্চতায় প্রায়শই বরফও পড়তে দেখা যায়।

৪. মৌসুমী বায়ু নিয়ন্ত্রণ:

দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতমালা বাধা পেয়ে আমাদের ভারতের বৃষ্টিপাত ঘটায়। শীতকালে মৌসুমী বায়ু উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ নিয়ে আবার প্রত্যাগমন করে।

তাই মৌসুমি বায়ুর নিয়ন্ত্রণে হিমালয় পর্বত এর গুরুত্ব অপরিসীম।

Post a Comment

0 Comments