ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বত এর গুরুত্ব

Effect Of Himalaya in the life of Indian People in Bengali

    পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয় আমাদের দেশ ভারতের উত্তর দিক বরাবর অবস্থিত। এর বিস্তার উত্তর-পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে উত্তর-পূর্বে নামচাবারোয়া পর্যন্ত। পূর্ব-পশ্চিমে এর বিস্তৃতি প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার (১৫০০ মাইল)। ভারত ছাড়াও চীন, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের ওপর দিয়েই পর্বতমালা বিস্তৃত।
এই বৃহৎ বিস্তৃতির জন্য স্বাভাবিকভাবেই ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বতমালা উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেছে।
আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব, ভারতের জনজীবনের উপর হিমালয় পর্বত এর প্রভাব।

ভারতের জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব
Background Image by Sergey Pesterev on Unsplash

হিমালয় পর্বতমালা ভারতের জলবায়ুর উপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে ?

জলবায়ুর ওপর প্রভাব:

ভারতের জলবায়ুতে যে কয়টি বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পর্বতমালা। ভারতের উত্তরভাগ জুড়ে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা ভারতকে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার হিমশীতল বাতাস থেকে রক্ষা করে। 
গ্রীষ্ম কলে ভারতীয় ভূখণ্ডে আগত দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি হিমালয় পর্বতে বাধা পেয়েই প্রায় সারা ভারতে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই কারণে ভারতের মেঘালয় মৌসিনরাম এর চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয় (বছরে প্রায় ১০৮০ সেমি)।

নদনদীর উৎস:

গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং তাদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী হিমালয় পর্বতের বড় করে জলে পুষ্ট হয়ে সারা ভারতের তথা ভারতের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উচ্চপ্রবাহে এই নদীর খরস্রোত কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই নদীগুলি হিমালয়ের থেকে যে পালি বয়ে আনে তা ভারতের সমভূমি অঞ্চল কে উর্বর করে তুলেছে এবং কৃষি কাজের উপযুক্ত করে তুলেছে।

কৃষিকাজ :

পরোক্ষ প্রভাব : গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-সিন্ধু নদীর উর্বর ঞ্লে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম এবং বিভিন্ন খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। কৃষিকাজের উন্নতি ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে এবং সার্বিক উন্নয়ন ঘটেছে।
প্রত্যক্ষ প্রভাব : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পর্বতের গায়ে ধাপ কেটে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় হিমালয় পর্বতের কেটে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং তথা সমগ্র তরাই ডুয়ার্স অঞ্চল চা চাষ করা হয়ে থাকে। আবার হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলে ধান চাষ‌ও করা হয়ে থাকে।

প্রতিরক্ষা:

ভারতীয় উপমহাদেশের একাংশ জল দ্বারা ঘেরা, একদিকে রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান আবার একদিকে রয়েছে চীন, নেপাল, ভুটান আবার ভারতের পূর্বে রয়েছে বাংলাদেশ, মায়ানমার। প্রতিটি দেশের সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে অসংখ্য সেনাবাহিনী-জওয়ানরা, যারা আমাদের প্রতিনিয়ত রক্ষা করছেন বহিঃশত্রুর থেকে। যদিও ভারতের উত্তরাংশে সিংহ ভাগই হিমালয় পর্বত বেষ্টিত তাও শুধুমাত্র ২০২০-২১ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা পিছু ভারতের ব্যয় ছিল ১,৩৪,৫১০ কোটি টাকা। হিমালয় পর্বত ভারতের উত্তর এ দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীরের মতো অবস্থান করে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় কে অনেক পরিমাণে হ্রাস করেছে।

বনজ সম্পদ:

হিমালয় পর্বতমালায় চিরহরিৎ ও সরলবর্গীয় অরণ্যের বিভিন্ন মূল্যবান এবং গাছের কাঠ পাওয়া যায়। এইগুলির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। যেমন : ওক, পাইন, দেবদারু, স্প্রুস ইত্যাদি। এছাড়াও হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন অনেক দুর্লভ উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যাদের থেকে অনেক জীবনদায়ী ওষুধ তৈরী হয়। যেমন - পেনিসিলিয়াম নোটেটাম , কুইনাইন ইত্যাদি।

তীর্থস্থান ও পর্যটন কেন্দ্র:

সমগ্র হিমালয় জুড়ে ছড়িয়ে আছে হিন্দুদের বিভিন্ন প্রাচীন এবং ঐতিহ্যমন্ডিত তীর্থক্ষেত্র। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, অমরনাথ, কৈলাস এবং কামরূপ কামাখ্যা ইত্যাদি।
হিমালয়ের নৈসর্গিক দৃশ্যের জন্য এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যেমন: সিমলা, কুলু, মানালি, দেরাদুন, কাশ্মীর, দার্জিলিং, গ্যাংটক প্রভৃতি। এই সব স্থানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক বছরের বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণ করতে আসেন।

পশুপালন:

হিমালয়ের পার্বত্য ঢালে ব্যাপক পরিমাণে পশুপালন করা হয়। এখানে পালিত পশু গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভেড়া, ছাগল, গরু ইত্যাদি।

শিল্প সমৃদ্ধি:

হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রাকৃতিক বা অন্যান্য কারণে এমন কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে যা ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় দেখা যায় না। যেমন: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক পশুপালন হওয়ার জন্য পশুর পশম থেকে পশম শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

Post a Comment

0 Comments