রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তায় কোন দিকটি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছিল?
উত্তর :
ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার দুটি দিক হলো-তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক। তিনি তার শিক্ষাভাবনার তাত্ত্বিক দিকটি বোঝাতে প্রবন্ধ লিখেছেন, ভাষণ দিয়েছেন ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তা ব্যক্ত করেছেন। আর শিক্ষাভাবনাকে ব্যবহারিক করতে তিনি তৈরি করেছেন শাস্তিনিকেতন। শিশুশিল্প পল্লীশিক্ষা থেকে শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়কে বাস্তবায়িত করতে তিনি শ্রীভূমি শান্তিনিকেতনে বিপুল বিস্তৃত খোয়াই এর রুক্ষ প্রান্তরে মহাভাব নিয়ে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন।
শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা : বীরভূমের খোয়াই - এর রুক্ষ প্রান্তরে ভুবনডাঙার ২০ বিঘা জমির এক প্রান্তে দুটি ছাতিম গাছের তলায় ব্রাহ্ম উপাসনা আশ্রমরূপে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'শান্তিনিকেতন আশ্রম' প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি পেয়েছিলেন বলেই মহর্ষি আশ্রম বাড়িটির নাম দেন 'শান্তিনিকেতন' অর্থাৎ 'শান্তিনীড়'। রবীন্দ্রনাথ ১২ বছর বয়সে পিতার সঙ্গে প্রথম শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। তারপর ক্রমশ রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে বেড়ে উঠেছে আজকের শান্তিনিকেতন বিশ্বতীর্থ বিশ্বনিকেতন।
আরও পড়ুন - ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স (IACS)
শান্তিনিকেতনের বিকাশ:
পাঠভবন: শান্তিনিকেতনের রূপকার রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন আশ্রমে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা পাঠভবন স্কুলটি তৈরি করেন। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় তাকে এ কাজে বিশেষ সাহায্য করেন। ব্রহ্মবান্ধব ছাত্রদের জন্য নিয়ম করেন প্রত্যুষে স্নানের পর উপাসনা, তারপর সমবেত কণ্ঠে বেদমন্ত্র উচ্চারণ, তারপর আচার্যদের প্রণাম করে গেরুয়া আলখাল্লা পড়ে খালিপায়ে তাছাড়া গাছের তলায় পড়তে যেতে হবে। সাত্ত্বিক নিরামিষ আহার করতে হবে, কূপ থেকে জল তোলা ও রান্না ছাড়া প্রায় সব কাজ ছাত্রদের করতে হত।
কলাভবন : শান্তিনিকেতনের কলাভবনটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়। শিল্পী নন্দলাল বসু, অসিত হালদার, সুরেন্দ্রনাথ কর, বাঁকুড়া রামকিঙ্কর বেইজ-এর শিল্প ভাবনার অপূর্ব মাধুর্য পেয়েছে এই ভবনটি। 'আধুনিক ভারতীয় স্থাপত্যের জনক' রামকিঙ্কর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য হলো - " রামকিঙ্কর ছিলেন সাধনার পথের পথিক, তাই এখানে এমন নিবিড়ভাবে ডুব সাগরে ডুব দিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে গেছেন"। গান্ধীজীর ভাষায়, "Shantiniketan is India."
0 Comments