ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স (IACS) / ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা

উনিশ শতকে ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তারে যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স বা সংক্ষেপে IACS তাদের মধ্যে অন্যতম। বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুন কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ছিল সমগ্র ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আলোচনা মূলক প্রতিষ্ঠান।
(IACS image) -There was a problem loading the image
IACS - এর নতুন গেট (Source : Wikipedia)


ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা:

কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এমডি ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার এককালে এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং এক জগদ্বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে বহু জায়গায় বক্তব্য রাখলেন এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা তাকে সমাজচ্যুত করারও চেষ্টা করেন। এসব কারণেই ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার এমন একটি বিজ্ঞান চিন্তা করেন জিটি ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং নিয়ন্ত্রিতও হবে। ১৮৬৯ তাঁর সম্পাদিত ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন (Calcutta journal of medicine) নামক পত্রিকায় এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭০ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় একটি প্রসপেক্টাস রচনা করেন। 

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর কর্মকান্ড:

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞান কে  সাধারণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা এবং পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এদেশে বিজ্ঞানচর্চার মান উন্নতি করা।
ডা মহেন্দ্রলাল সরকার আশা করতেন একদিন এই প্রতিষ্ঠানটি ইংল্যান্ডের রয়েল ইনস্টিটিউট এর সমকক্ষ হয়ে উঠবে। এই জন্য তিনি আই এ সি এস এ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে নামকরা বিজ্ঞানীদের দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বক্তৃতার‍ও আয়োজন করতেন। তৎকালীন ছাত্র সমাজে এই সব বক্তৃতার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যেসব বিজ্ঞানীরা এখানে গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, মেঘনাথ সাহা, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
    এখানে গবেষণা করেই বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন তার বিখ্যাত রমন ক্রিয়া জন্য ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য আইএসিএস দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ জনগণের মধ্যে প্রচার করার জন্য প্রকাশিত করে তাদের নিজস্ব পত্রিকা Indian journal of physics। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন। এই পত্রিকাতেই তিনি তাঁর গবেষণার কাজ প্রকাশ করেছিলেন যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
    
    বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যাতে এক্স রশ্মি, আলোক-বিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার কাজ করা হয়।

    আইএসিএস পরবর্তীকালে বৌবাজার থেকে যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়।

Post a Comment

0 Comments