গাছ আমাদের বন্ধু রচনা

গাছ আমাদের বন্ধু

"দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর''

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

benefits-of-trees-in-bengali
Photo by Sergei Akulich on Unsplash

প্রত্যক্ষভাবে গাছের ভূমিকা:

ভূমিকা:

আমরা সকলে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বাস করি। পরিবেশ গঠিত হয় জীব এবং জড় নিয়ে জীবকুলকে ২ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 
১। প্রাণীকুল
২। উদ্ভিদকুল
প্রাণীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু তা হলেও মানুষকে অন্যান্য বিভিন্ন জীবের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। যে জীব এর ওপর মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুইভাবেই সবথেকে বেশি নির্ভরশীল, তা হল উদ্ভিদ / গাছ।

আমাদের জীবনে গাছের উপকারিতা:

খাদ্য উৎস হিসাবে:

    মানুষ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না, শুধুমাত্র মানুষই নয় - পৃথিবীর কোন প্রাণীই নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। গাছ বা উদ্ভিদ হল একমাত্র জীব, যা নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। উদ্ভিদ তার দেহের (মূলত পাতায়) ক্লোরোফিলযুক্ত সবুজ অংশে  জল, খনিজ পদার্থ এবং সূর্যালোকের সহকারে খাদ্য তৈরি করে। আর, অন্যান্য প্রাণীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। অতএব আমাদের সকল খাদ্য মূল উৎস হল উদ্ভিদ।

    খাদ্য ছাড়াও আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে উপাদানটি তা হল অক্সিজেন। গাছ সূর্যালোকের সাহায্যে খাদ্য তৈরি করার সময় বাতাসে অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে। জীবনধারণের জন্য এই অক্সিজেন প্রাণীরা শ্বাসকার্য চালানোর  প্রশ্বাস এর সঙ্গে গ্রহণ করে। আবার, নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রাণীরা বাতাসে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করে, উদ্ভিদকুল তা খাদ্য তৈরীর সময় গ্রহণ করে এবং পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
    এভাবেই উদ্ভিদ আমাদের পরিবেশকে নির্মল এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

শুধু অক্সিজেনই নয়, গাছ প্রাণীদের আরো অজস্র উপায়ে সাহায্য করে।
গাছ থেকে মানুষ কাঠ পায়, যা থেকে সে তৈরি করে আসবাবপত্র (যেমন - খাট, টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ আলমারি, দরজা, জানলা প্রভৃতি)। এছাড়াও, গাছের শুকনো ডাল মানুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে।
গাছ থেকে মানুষ পায় ফুল, ফল। গাছের বিভিন্ন অংশ (যেমন শিকড়, ডালপালা, পাতা) ইত্যাদি থেকে অনেক দুর্মূল্য-জীবনদায়ী ওষুধ তৈরি করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে গাছপালা জরিবুটি ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন জটিল এবং দুরারোগ্য ব্যাধি চিকিৎসা করার রীতি চলে আসছে।

গাছের শিকড় মাটিকে আটকে রাখতে সাহায্য করে। যেসব জায়গায় বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয় এবং তার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়, সেখানে গাছ লাগালে মৃত্তিকা ক্ষয় অনেকটাই কম করা যায়। পুরনো দিনে গ্রীষ্মকালে পথিকজন গাছের তলায় বিশ্রাম নিতেন, গাছের তলায় আশ্রয় নিয়ে তারা গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যকিরণের হাত থেকে রক্ষা পেতেন।

পরোক্ষভাবে গাছের ভূমিকা:

গাছ আবহাওয়াকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত করে। খাদ্য তৈরীর সময় গাছ পরিবেশে যে জলীয়বাষ্প ত্যাগ করে, তা বৃষ্টি হতে সাহায্য করে। গাছ শব্দদূষণের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে

উপসংহার:

গাছের এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ দিনের পর দিন ধরে নির্বিচারে গাছ কেটেই চলেছে। ফলস্বরূপ, বাস্তুতন্ত্র তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে পড়ছে। এভাবেই চলতে থাকলে একদিন আমাদের পৃথিবী একদিন বিশাল মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই আমাদের  সকলের এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। উদ্ভিদকূলকে রক্ষা করতে গেলে বিভিন্নরকম কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে - বিদ্যালয়, সামাজিক স্তরে বনসৃজন করতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া গাছ কাটা যাবে না। খুব দরকারে গাছ কাটতে হলে শুধুমাত্র বড় গাছ কাটতে হবে। একটি বড় গাছ কাটলে তার পরিবর্তে ১০ টি চারা গাছ লাগাতে হবে।
মনে রাখতে হবে -
"একটি গাছ একটি প্রাণ"

আরো পড়ুন - সমাস কাকে বলে ? সমাসের প্রকারভেদ

নিবন্ধ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন - উদ্ভিদ কাকে বলে?

উত্তর - যা মাটি ভেদ করে ওঠে, তাকে উদ্ভিদ বলে।

প্রশ্ন - গাছ আমাদের কি দেয়?

উত্তর - গাছ আমাদের ফুল, ফল, জ্বালানী, আসবাবপত্র দেয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা আমরা গাছের থেকে পাই, সেটি হল অক্সিজেন।

প্রশ্ন - মানবসমাজ তথা জীবকুলের প্রতি গাছের সবথেকে বড়ো দান কী ?

উত্তর - মানবসমাজ তথা সমগ্র জীবকুলের গাছের সবথেকে বড়ো দান হল প্রাণদায়ী বায়ু অক্সিজেন।


Post a Comment

0 Comments