সমাস
Photo by Bethany Cirlincione on Unsplash |
সমাস কাকে বলে?
পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের এক পথে রূপান্তরিত হওয়াকে সমাস বলা হয়।
যেমন : 'যিনি রাজা তিনিই ঋষি' - এখানে প্রতিটি পদই অর্থ সম্বন্ধযুক্ত, এইমতো সম্বন্ধযুক্ত পদগুলিকে সংক্ষেপে একটি শব্দের মধ্যে আমরা এই ভাবে প্রকাশ করতে পারি - রাজর্ষি।
সমাস ব্যবহার করব কেন / সমাসের প্রয়োজনীয়তা :
- ১) দুই বা ততোধিক শব্দকে একসঙ্গে একটি শব্দে পরিণত করলে লেখার বা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হয়।
- ২) ভাষার মাধুর্য বৃদ্ধি পায়।
- ৩) নতুন শব্দ তৈরি হয়।
এখন আমরা সমাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা নিয়ে আলোচনা করব:
ব্যাসবাক্য:
- যে বাক্যের দ্বারা সমাসবদ্ধ পদের অর্থ বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে।
- সমাসবদ্ধ পদ কে বিশ্লেষণ করলে যে বাক্য পাওয়া যায় তাকে ব্যাসবাক্য বলে।
যেমন : মন রূপ মাঝি - মানমাঝি ; আলোচ্য উদাহরণটিতে "মন রূপ মাঝি" হল ব্যাসবাক্য।
সমস্যমান পদ:
ব্যাসবাক্যের অন্তর্গত যে সকল পদের সাহায্যে সমাসবদ্ধ পদ গঠিত হয়, তাদের সমস্যমান পদ বলা হয়।
যেমন : মন রূপ মাঝি - মানমাঝি ; আলোচ্য উদাহরণটিতে 'মন' এবং 'মাঝি" হল সমস্যমান পদ।
পূর্বপদ:
ব্যাসবাক্যের অন্তর্গত সমাসবদ্ধ পদের যে পদটি পূর্বে অবস্থান করে বা ব্যাসবাক্যের মধ্যে আগে থাকে তাকে পূর্বপদ বলা হয়।
যেমন : মন রূপ মাঝি - মানমাঝি ; আলোচ্য উদাহরণটিতে 'মন' পূর্বপদ।
পরপদ:
ব্যাসবাক্যের অন্তর্গত সমাসবদ্ধ পদের যে পদটি পরে অবস্থান করে বা ব্যাসবাক্যের মধ্যে পরে থাকে তাকে পূর্বপদ বলা হয়।
যেমন : মন রূপ মাঝি - মানমাঝি ; আলোচ্য উদাহরণটিতে 'মাঝি' পরপদ।
সমাসের শ্রেণীবিভাগ:
বাংলা ব্যাকরণ এ সমাসকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। (যদিও এই নিয়ে বৈয়াকরণিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।) তবুও আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী সমাজকে মোটামুটি ৯ টি ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা:
- দ্বন্দ্ব সমাস
- কর্মধারয় সমাস
- তৎপুরুষ সমাস
- বহুব্রীহি সমাস
- দ্বিগু সমাস
- অব্যয়ীভাব সমাস
- নিত্য সমাস
- অলোপ সমাস
- বাক্যাশ্রয়ী সমাস
আবার, চতুষ্টয়বাদীদের মতে সমাস চার প্রকার।
যথা -
- অব্যয়ীভাব সমাস
- তৎপুরুষ সমাস
- বহুব্রীহি সমাস
- এবং দ্বন্দ্ব সমাস
সমাস সংক্রান্ত আলোচনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো -
সমস্যমান সহায়ক পদঃ
ব্যাসবাক্যে অনেক সময় সমস্যমান পদ ছাড়াও অন্যান্য কিছু পদ থাকে / অবস্থান করে, এদেরকে সমস্যমান সহায়ক পদ বলা হয়।
যেমন : মন রূপ মাঝি - মানমাঝি ; আলোচ্য উদাহরণটিতে 'রূপ' হল সমস্যমান সহায়ক পদ ।
সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য:
সন্ধি |
সমাস |
সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন হয়। |
সমাসে পদের সঙ্গে পদের মিলন হয়। |
সন্ধিতে প্রত্যেকটি পদের অর্থ অক্ষুণ্য থাকে। |
সমাসে কখনও কখনও উভয় পদের, কখনও পরপদের, কখনও পুর্বপদের আবার কখনও অন্য পদের অর্থ প্রাধান্য পায়। |
সন্ধিতে যে পদের মিলন হয় তাদের মধ্যে অর্থের সম্পর্ক সম্পর্ক থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। |
সমাসে যে পদগুলির মিলন হয় তাদের মধ্যে সবসময় অর্থের সম্পর্ক থাকে। |
সন্ধিতে পদের পারমপর্য রক্ষিত হয়। |
সমাসে কখনও কখনও পদের পারমপর্য রক্ষিত হয় না। কখনও পুর্বপদ পরে বসে আবার কখনও পরপদ আগে বসে। |
0 Comments