পরিবেশ বিপর্যয় কেন ঘটে | বিপর্যয়ের কারণ

পরিবেশ বিপর্যয় কেন ঘটে

ভূমিকা :

যে পরিবেশের উপর নির্ভর করে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে সে পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত পরিবেশের বিপর্যয়ের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী। এ কারণে মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন হয়ে উঠেছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের পরিবেশে এসেছে দ্রুত পরিবর্তন। মানুষের জীবন যাত্রার মান ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করলেও পরিবেশের মান ক্রমশ। অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সকল মানুষের সচেতন থাকা প্রয়োজন।

বিপর্যয়

পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ :

পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য প্রধানত মনুষ্য সৃষ্ট কারণকে দায়ী করা হয়। তবে প্রাকৃতিক কারণও এর জন্য দায়ী। নিম্নে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ আলোচনা করা হল:

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :

পরিবেশের বিপর্যয়ের জন্য প্রাকৃতিক কারণসমূহের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্যতম। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, ঝড়, খরা, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, মরুকরণ, হিমবাহ, আর্সেনিক, লবণাক্ততা, ভূমিধস, উষ্ণপ্রবাহ বিক্ষেপণসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। বিশ্বের সর্বত্র পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রধানত দায়ী করা হয়। এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে পরিবেশের স্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হয়।

২. পরিবেশ দূষণ :

 বর্তমান বিশ্বে সর্বত্র জল, বায়ু, শব্দ, মাটি প্রভৃতি দূষণ বিস্তার লাভ করছে। মানুষের ভোগবিলাস, অসচেতনতা, পরিবেশকে অধিকহারে ব্যবহার, দায়িত্বহীনতা প্রভৃতির ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে শিল্পায়নের বর্জনিষ্কাশনের দরুন জল যেমন দূষিত হচ্ছে তথাপি শিল্পের, ইট ভাটার এবং গাড়ির কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশে ব্যাপকহারে বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে জলবায়ুতে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা ভয়াবহ। বিশ্বের বরফ এখন গলতে শুরু করছে ব্যাপকহারে।

তাছাড়া এসব দূষণ একদিকে যেমন পরিবেশের বিপর্যয় সাধন করছে তেমনি মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি করছে, যা বিপর্যয়ের মাত্রাকে আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করছে।

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি :

জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম সমস্যা। বিশ্বের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর যাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যাকে যেমন জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনার অভাব, যান্ত্রিক অনুন্নয়নসহ নানা দুর্বলতায় জনসংখ্যাকে | কোনভাবেই সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপকতায় কৃষিজমি, বনভূমি, জল সম্পদ, খনিজ সম্পদ প্রভৃতির চাপ সৃষ্টি হয়। মানুষ দৈনন্দির জীবনে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করে।। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট চাপ পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।

৪. সচেতনতার অভাব :

সমগ্র বিশ্বে পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য মানুষের সচেতনতার অভাব অনেকাংশে দায়ী। পরিবেশের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে সচেতনতা থাকলে পরিবেশগত চাপ কম সৃষ্টি হয়। বিপরীতক্রমে পরিবেশের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়, যা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়।

তাই, পরিবেশে বিপর্যয় কম করতে হলে প্রথমে মানুষকে সচেতন হতে হবে।

উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবেশ বিপর্যয় বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিল্পায়ন, দারিদ্র্য, যুদ্ধ, নগরায়ণসহ প্রভৃতি কারণে দিনদিন পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করলেও পরিবেশের মান ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করার জন্য সকল মানুষের সচেতন থাকা প্রয়োজন।

Post a Comment

0 Comments