বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে?
সূচনা : দামোদর নদীকে বাংলার দুঃখ বলা হয়। এক সময় প্রতিবছর দামোদর নদীতে বন্যার ফলের নদীর জল পার্শ্ববর্তী বহু গ্রামে ঢুকে বন্যার সৃষ্টি করত। কিন্তু বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দামোদর নদীতে এখন আগের মত আর বন্যা দেখা যায় না। দামোদর নদীতে যে সকল উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বন্যার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়ছে, সেগুলি বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বা বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা (যেহেতু এই পরিকল্পনা মূলত নদী এবং নদী উপত্যকাতেই কার্যকরী হয় তাই একে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা ও বলা হয়) অন্তর্গত।
বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা কাকে বলে ? / বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে:
যে পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে নদী উপত্যকা এবং অববাহিকা অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন মৎস্যচাষ পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি প্রভূত সুবিধা লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি নদী অববাহিকা অঞ্চলের মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায় তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রূপায়ণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল : ১) দামোদর নদী / উপত্যকা পরিকল্পনা, হিমাচলের ভাকরা-নাঙ্গাল নদী উপত্যকা পরিকল্পনা এবং উড়িষ্যার হিরাকুদ নদী উপত্যকা পরিকল্পনা।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য:
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বিবিধ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণের পেছনে যে মূল উদ্দেশ্য গুলি থাকে তা হল -
১) বন্যা নিয়ন্ত্রণ:
বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদীগুলিতে সারাবছর তেমনভাবে জল না থাকলেও কোন কোন বছর অতিবৃষ্টি হলে নদীতে প্রচুর পরিমাণে জল চলে আসে এবং একসঙ্গে ততটা জল তখন নদী নিয়ে যেতে পারে না, ফলে বন্যা হয়। বন্যার ফলে নদী অববাহিকা অঞ্চলে ধাকা মানুষজন প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নদীতে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে জলাধার স্থাপন করে বরষায় নদীর এই অতিরিক্ত জলকে জলাধার এর মধ্যে সঞ্চিত করে রাখা যাতে যার ফলে নদী অববাহিকা অঞ্চলে বন্যার প্রবণতা অনেকাংশে কমানো যায়।
২) জলসেচ:
বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী তে সারা বছর ধরে তেমনভাবে জল না থাকায় শুষ্ক অঞ্চল গুলিকে যেখানে নলকূপ সেচ বা সেচ তেমন সহজলভ্য নয় এবং জল সেচের মাধ্যমে হিসেবে নদী খাল বিল প্রধানত ব্যবহার করা হয়, সেখানকার নদী গুলিতে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বর্ষার সময় বৃষ্টি অতিরিক্ত জল কে জলাধার স্থাপন করে জলাধার গুলিতে সঞ্চয় করে রাখা যায় এবং বছরের পরবর্তী সময়ে সেই জল অল্প অল্প করে জলাধার থেকে ছেড়ে দিয়ে সারা বছর ধরে ওই জলের সাহায্যে জল সেচ করা যায়।
৩) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন:
নদী পরিকল্পনা গ্রহণের সময় যেই সব জলাধারগুলি স্থাপন করা হয়, অপেক্ষাকৃত উচ্চস্থানে সেই সব জলাধারগুলির জলে নিচে ফেলে টারবাইন এর সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
৪) মৎস্য চাষ: বহুমুখী নদী পরিকল্পনায় সৃষ্ট জলাধারগুলিতে মাঝে মাঝে মৎস্য চাষও করা হয়।
৫) পর্যটন কেন্দ্র:
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা। বহুমুখী নদী পরিকল্পনা যেসব জলাধারগুলো তৈরি করা হয় সেগুলির নৈসর্গিক দৃশ্যের জন্য অনেক পর্যটকই বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন জলাশয় গুলি প্রত্যক্ষ করার জন্য। এভাবে রিজাল আসা দিনগুলি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী:
১) বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে? অথবা বহুমুখী নদী পরিকল্পনার সংজ্ঞা লেখ।
উত্তর : যে পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে নদী উপত্যকা এবং অববাহিকা অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন মৎস্যচাষ পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি প্রভূত সুবিধা লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি নদী অববাহিকা অঞ্চলের মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায় তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
২) পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য বহুমুখী নদী পরিকল্পনা টির নাম লেখ।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য বহুমুখী নদী পরিকল্পনা টি হল দামোদর নদী উপত্যকা পরিকল্পনা।
৩) ভাকরা নাঙ্গাল পরিকল্পনা কোন নদীর ওপর বাস্তবায়িত হয়েছে ? অথবা ভাকরা নাঙ্গাল নদী পরিকল্পনা কোন নদীর উপর নেওয়া হয়েছে ?
উত্তর : ভাকরা নাঙ্গাল নদী পরিকল্পনা হরিয়ানার সাটলেজ / সাতলেজ নদীর ওপর বাস্তবায়িত হয়েছে।
৪) ভাকরা নাঙ্গাল পরিকল্পনা কোন রাজ্যে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ভাকরা নাঙ্গাল নদী পরিকল্পনা হরিয়ানা রাজ্যে নদীর ওপর বাস্তবায়িত হয়েছে।
৫) হিরাকুদ পরিকল্পনা কোন রাজ্যে অবস্থিত?
উত্তর : হিরাকুদ পরিকল্পনা উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত।
0 Comments