রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল | রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে কী জানা যায় ?

বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৯৭১-১৯৩৭) ছিলেন নিউজিল্যান্ডের এক প্রখ্যাত রসায়নবিদ। তিনি পরমাণুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অব-পারমাণবিক কণা প্রোটন আবিষ্কার করে রসায়নের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।


১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার বিখ্যাত আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা করেন। এই যুগান্তকারী পরীক্ষা থেকে তিনি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আসেন। এসব সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করেই ১৯১১ সালে তিনি একটি পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন। তার এই পরমাণু মডেলকে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল বলে আখ্যা দেওয়া হয়।


(বিশেষ দ্রষ্টব্য - তাঁর এর গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৯০৮ খিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার সম্মানে ভূষিত করা হয়।


রসায়ন বিজ্ঞানের ইতিহাসে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল ছিল প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক পরমাণু মডেল। এর আগে বিজ্ঞানীরা যেসব পরমাণু মডেল এর ধারণা দিয়েছিলেন তা ছিল তাদের কল্পনাপ্রসূত - বিজ্ঞান ভিত্তিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী প্রকাশিত হয়নি - রসায়ন বিজ্ঞানের ইতিহাসে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল প্রকাশ এক উল্লেখযোগ্য এবং যুগান্তকারী ঘটনা।


আজকের এই পোস্টে, আমরা রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও জানবো রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল কেন গুরুত্বপূর্ণ ও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে মূলত কী জানা যায়।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (Rutherford's Atomic Model)

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল:

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য এবং সর্বসম্মত বিষয়গুলি নিম্নরূপ :

১) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের বলা হয়েছে - একটি পরমাণুর কেন্দ্র একটি ধনাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত / আধান যুক্ত স্থান বা অংশে থাকে, একে বলা হয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস।

২) পরমাণুর নিউক্লিয়াস পরমাণুর তুলনায় আকারে খুবই ছোট। বিভিন্ন পরীক্ষার সাহায্যে বর্তমানে বোঝা যাচ্ছে, পরমাণুর ব্যাস 10-⁸ cm কিন্তু পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাস মাত্র 10-¹³। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে পরমাণুর নিউক্লিয়াস কেন্দ্র পরমাণু তুলনায় সত্যিই খুব ছোট।

৩) পরমাণুর ভর এর সিংহভাগ নিউক্লিয়াসের মধ্যে আবদ্ধ।

৪) পরমাণুর বেশিরভাগ স্থান ফাঁকা, শুধুমাত্র নিউক্লিয়াস অংশটি ধনাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত কণা দ্বারা পূর্ণ।

৫) পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক আধান নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে।

৬) পরমাণুর নিউক্লিয়াস ছাড়াও পরমাণুর আরো একটি অংশ বর্তমান - একে বলা হয় পরমাণুর ইলেকট্রন মহল।

৭) পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ইলেকট্রনগুলি বিভিন্ন সমকেন্দ্রিক বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে।

৮) পরমাণুতে যত চার্জের / আধুনিক প্রোটন থাকে ঠিক তত আধানের ইলেকট্রন থাকে। ‌ তাই পরমাণু নিস্তড়িত হয়।

৯) ধনাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত নিউক্লিয়াস ও ঋণাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত ইলেকট্রনের মধ্যে ক্রিয়ারত স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল এবং ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ বলের সমান এবং বিপরীত মুখী। - রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুযায়ী, এ কারণেই ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ঘিরে তীব্রবেগে আবর্তন করা সত্ত্বেও নিজের কক্ষপথে স্থির থাকে এবং কখনোই নিউক্লিয়াসের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ে না।


রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে কী জানা যায় ?

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে  পরমাণুর মধ্যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব প্রথম জানা যায়। এর ফলে বোঝা যায়, নিউক্লিয়াস ধনাত্মক তড়িৎ কণা দ্বারা পূর্ণ এবং পরমাণুতে সমান চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন থাকে। রাদারফোর্ড বলেন পরমাণুতে সমান চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন ও প্রোটন এর উপস্থিতির ফলে পরমাণু নিস্তড়িত হয়।

Post a Comment

0 Comments