মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব
মাটি কাকে বলে :
ভূত্বকের উপরে যে আলগা, কোমল ও সূক্ষ্ম আবরণ অবস্থিত যাতে, উদ্ভিদ জন্মাতে পারে তাকে মাটি / মৃত্তিকা বলে।
• মৃত্তিকা ক্ষয় কাকে বলে :
যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বা মানুষের কার্যাবলীর ফলে মাটির ওপর হালকা ও জমাট না বাধা কণা পৃথক হয়ে দুর দুরান্তে অপসৃত হয় তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
আরও পড়ুন : গঙ্গা নদীকে আদর্শ নদী বলা হয় কেন ?
• মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব :
১) মাটির উর্বরতা হ্রাস :
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবীয় কারণে (যেমন জলপ্রবাহ) দ্বারা চাদর ক্ষয় প্রক্রিয়ায় মাটির উপর স্তরের অপসারণ করল মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। মাটি ক্ষয়ের জন্য মাটির পৃষ্ঠতলের জৈব ও খনিজ সমৃদ্ধ মাটি অপসৃত হয়ে (সরে গেলে) মাটির পুষ্টি মৌলের অপসারণ ঘটে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে । এর ফলে মাটির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং কৃষি উৎপাদন কমে।
২) ভৌম জলের উচ্চতা ও মাটির আর্দ্রতা হ্রাস :
মাটি ক্ষয়ের ফলে মাটির পৃষ্ঠতলের নরম মাটি অপসারিত হয় এবং নিচের কঠিন মৃত্তিকা উন্মুক্ত হয়। এই কঠিন মৃত্তিকার অপর দিয়ে বৃষ্টির জল বয়ে গেলে তা চুইয়ে নিচে পৌছাতে পারেনা, ফলতঃ জলের অনুস্রাবণ হার কমে যায় ও ভৌম জলের ভান্ডার কমে যায়। তাছাড়াও কঠিন মৃত্তিকার জন্য কৈশিক প্রক্রিয়ায় ভূগর্ভস্থ জল মাটির উপরে উঠে আসতে পারে না। যার ফলে মাটির পৃষ্ঠতলের আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
৩) বন্যা ও খরা - র প্রকোপ বৃদ্ধি :
আর্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় পেলে ক্ষয়জাত পদার্থ নদী গর্ভে (বা বিভিন্ন জলাশয়ে) জমা হয় নদী বা বিভিন্ন জলাশয়ে গভীরতা কমিয়ে দেয়। গভীরতা কমে যাওয়ার ফলে নদীর জল ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। বর্ষাকালে জলাশয় অতিরিক্ত জল চলে আসলে নদী সেই জল ধরে রাখতে পারেনা, ফলতঃ নদী বন্যা সৃষ্টি হয়। আবার শুষ্ক অঞ্চলের মাটি ক্ষয়ের ফলে বনভূমির আয়তন হ্রাস পাবে। বনভূমি বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে, তাই বনভূমির আয়তন হ্রাস পেলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পাবে, এজন্য খরার সৃষ্টি হবে।
৪) মরু অঞ্চলের প্রসারণ :
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে উর্বরতা আদ্রতা হারিয়ে মাটি অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়বে। পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এই জমি ক্রমশ উদ্ভিদহীন বালিপূর্ণ মরুভূমিতে পরিণত হবে। অরণ্যভূমি ধ্বংস করে মাটি আলগা করে দিলে মরুভূমির সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ু প্রবাহের অনেকগুণ বেড়ে যায়, ফলে বায়ুপ্রবাহের দ্বারা মাটির ক্ষয়ও বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে মরুভূমিরও বিস্তার হতে থাকে।
৫) ভূমিধসের পরিমাণ বৃদ্ধি :
অবৈজ্ঞানিক প্রথায় পাহাড়ের ঢালে ঝুমচাষ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিস্ফোরক দ্রব্য ফাটানো, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলন ইত্যাদি কারণে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নদীর জলের ধাক্কায় জলপ্রবাহ জনিত কারণে এবং সমুদ্রের তৃণভূমিতে সমুদ্র জলপ্রবাহ জনিত কারণে ভূমিধস দেখা যায়।
৬) অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি হ্রাস :
ভারত-বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ সবাই মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে মাটির উর্বরতা কমে গেলে এদেশের বহু মানুষ যারা কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা ধারণ করেন তারা গভীর সংকটের সম্মুখীন হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভবে অনেক শিল্প কৃষি ও তার দ্বারা উৎপন্ন সামগ্রী ওপর নির্ভরশীল -তাই কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস পেলে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত জনগণের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।
Keywords (Queries solved in this post) :
1 Comments
👍
ReplyDelete