ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা তারতম্যের কারণ আলোচনা করো | ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনঘনত্ব তারতম্যের কারণ | ভারতের জনঘনত্বের তারতম্যের কারণ

ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশ। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪২২ জন। তবে আমাদের দেশের সব জায়গায় জনঘনত্ব সমান নয়। কোন কোন জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন আবার এমনও কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে কোন মানুষ বাস করে না বললেই চলে। যেমন মুম্বাই শহর এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জনঘনত্ব যত বেশি উত্তরাখণ্ডের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের জনঘনত্ব তার তুলনায় অনেক কম।
আমাদের দেশে এরকম অসম জনসংখ্যা বন্টন এর পেছনে বিভিন্ন কারণ বর্তমান।
আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব ভারতের অসম জনসংখ্যা বন্টন এর কারণ সম্পর্কে।
ভারতের অসম জনসংখ্যা বন্টন এর কারণ কে আমরা মোটামুটি দুটি ভাগে আমরা ভাগ করতে পারি।



প্রাকৃতিক / ভৌগলিক কারণ:

ভূপ্রকৃতি:

ভারতের অসম জনসংখ্যা বন্টনের জন্য সবথেকে দায়ী আমাদের দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূপ্রকৃতি। আমাদের দেশের সব জায়গার ভূপ্রকৃতি সমান নয়। যেমন : উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল খুবই বন্ধুর ভূপ্রকৃতির জন্য খুবই দুর্গম। আবার রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মরুভূমি অবস্থান করার জন্য ওই অঞ্চলগুলো দুর্গম। এইসব দুর্গম পরিবেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যাবস্থা তেমন উন্নত নয়। তাই, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না ঘটায় তেমন বড় শিল্প ও কৃষির বিকাশ এই সমস্ত স্থানে ঘটে নি।
আবার ভারতের বিভিন্ন নদী উপত্যকা সংলগ্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সমতল প্রকৃতির। আর এই কারণ এই সমস্ত স্থানে কৃষি ও শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। ফলে, ওই সমস্ত স্থানের জনঘনত্ব পূর্বোক্ত স্থানের জনঘনত্ব অপেক্ষা অনেক বেশি।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় মালভূমি এবং তার তুলনায় সমভূমির জনঘনত্ব অনেক বেশি।
যেমন: গাঙ্গেয় সমভূমির জনঘনত্ব (মোটামুটি ১০০০ জন প্রতি বর্গকমি) অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব এর। (মাত্র ১৭ জন প্রতি বর্গকমি) প্রায় ৬০ গুণ বেশি। রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে গড়ে মানুষ বাস করে না বললেই চলে।


জলবায়ু:

ভারত মূলত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হলেও ভারতের বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেসব অঞ্চলের জলবায়ু প্রতিকূল প্রকৃতির তার চেয়ে যেসব অঞ্চলের জলবায়ু মনোরম এবং আরামদায়ক প্রকৃতির সেখানে জনঘনত্ব বেশি হয়।
যেমন রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চল সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থান করায় এখানকার জলবায়ু চরমভাবাপন্ন (গ্রীষ্ম ও শীতকালে বা দিতে ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হয়) আবার গোয়া সমুদ্রের কাছে অবস্থান করায় এখানকার জলবায়ু সমভাবাপন্ন (গ্রীষ্ম ও শীতকালে বা দিতে ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব একটা বেশি হয় না)। আবার পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে জলবায়ু প্রতিকূল প্রকৃতির হয়ে যায়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় জলবায়ুগত কারণে গোয়া এবং রাজস্থানের মধ্যে স্পষ্টতই গোয়ার জনঘনত্ব বেশি হবে। মোটামুটি ভারতের উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু বেশ মনোরম প্রকৃতির।
* ভারতে অসম বৃষ্টিপাতের বন্টন - ই মূলত জলবায়ুর মূল নিয়ন্ত্রক।


মৃত্তিকা:

ভারতের সর্বত্র একই ধরণের মৃত্তিকা দেখা যায় না। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী ইত্যাদি নদীগঠিত উর্বর পলি মৃত্তিকা দেখা যায়, এইজন্য এখানে কৃষিকাজ ভালো হয়। আবার, ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড, মেঘালয় , মিজোরাম , নাগাল্যান্ড ইত্যাদি রাজ্যে লাল মাটি, ল্যাটেরাইট মাটি ও রাজস্থান রাজ্যে মরু মৃত্তিকা থাকায় এখানে কৃষিকাজ তেমন ভালো হয় না।
পলিমাটি সমৃদ্ধ স্থানে কৃষিকাজ ভালো হওয়ায়  পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের জনঘনত্ব ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ইত্যাদি রাজ্যের তুলনায় বেশি।


নদনদী:

আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী ইত্যাদি নদীর অববাহিকা উর্বর পালিসমৃদ্ধ হওয়াতে এখানে কৃষিকাজের বিকাশ ঘটেছে। তাই এইখানে জনঘনত্ব বেশি। এখানে নদনদী থাকার জন্য কৃষিকাজ বাদেও জলসেচ, জলপথে পরিবহন, পানীয় জল সরবরাহ, শিল্পের প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি কাজে অধিক সুবিধা পাওয়া যায়।


বনভূমি:

ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক কারণে গভীর বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: ছত্রিশগড়ের দণ্ডকারণ্য অঞ্চল, অরুণাচল প্রদেশের হিমালয় পর্বত অরণ্য, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল প্রভৃতি। জীবনধারণের তেমন সুবিধা না থাকায় এখানে তেমন জনবসতি গড়ে ওঠেনি। 

অর্থনৈতিক কারণ

কৃষি ও পশুপালন:

ভারত কৃষি নির্ভর দেশ। এখানকার গ্রাম্য জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। তাই যেসব অঞ্চল উর্বর মৃত্তিকা যুক্ত, যেখানে জল সেচের সুবিধা রয়েছে, পশু পালনের জন্য চরণ ক্ষেত্র রয়েছে ভারতের সেই সব জায়গাতে জনবসতি বেশি পরিমাণে গড়ে উঠেছে। যেমন - গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে কৃষি কাজের জন্য অনেক জনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার, গুজরাট রাজ্যে মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও পশুচারণ ক্ষেত্র থাকায় পশুপালন জীবিকার উপর নির্ভর করে জনবসতি গড়ে উঠেছে।


শিল্প:

ভারতের যেসব অঞ্চলে বেশি পরিমাণে শিল্প গড়ে উঠেছে, সেই শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্ভর করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। যেমন ঝাড়খন্ডে জামশেদপুর অঞ্চলে টাটার লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানার প্রভাবে শহর গড়ে উঠেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
সহমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সমতল হওয়ায় এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, আবার হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অত্যন্ত বন্ধুর প্রকৃতির হাওয়াই এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। সর্বত্র সড়ক ও রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে জনবসতি ব্যাপক পরিমাণে গড়ে ওঠেনি।

পর্যটন:

যেসব অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে সেই শিল্পের উপর নির্ভর করে সেইসব অঞ্চলে শহর -নগর ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। যেমন- দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এখানে মনোরম আবহাওয়া জন্য পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটায় জনবসতি গড়ে উঠেছে।


সামাজিক কারণ

ধর্মীয় স্থান / তীর্থস্থান:

বারাণসী, মথুরা, গয়া, ইত্যাদি স্থানে ধর্মীয় কারণে শহর-নগর ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। তাই এখানে জনসংখ্যা বেশি।


রাজনৈতিক কারণ:

রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকারের অনুকুল/ প্রতিকূল নীতির প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে জনসংখ্যা বিভিন্ন রকম হয়।
জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনঘনত্ব খুবই কম.

Post a Comment

0 Comments