ভৌম জলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব

      ভৌম জলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব লেখো :      

thumbnail

ভৌমজল কি ?

    উত্তর : ভূপৃষ্ঠের নিচে মাটি, রেগোলিথ কিংবা শিলারন্ধ্রের মধ্যে যে জল পাওয়া যায় তাকে, ভৌম জল বলা হয়।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে (গৃহস্থের কাজে), কৃষিকাজে, শিল্পে ভৌম জলের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্যই জলকে জীবন বলা হয়। বিভিন্ন কারণ যেমন দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পের বৃদ্ধি ও তৎসঙ্গে তাতে প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা বৃদ্ধি, কৃষিকার্যে কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রসার ইত্যাদির ফলে ভৌম জলের চাহিদা বেশ কয়েক দশকে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৌম জলের মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করবে, যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ -

) ভৌম জলস্তরের অবনমন :


    প্রতিনিয়ত মাটির তলা থেকে ভৌম জল সংগ্রহ করার ফলে একদিকে যেমন জলস্তর ব্যাপক পরিমাণে কমে যাচ্ছে, তেমনি এযুগে ব্যাপক নগরায়নের ফলে বৃষ্টির জল চুইয়ে চুইয়ে ভূগর্ভে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে ভূগর্ভস্থ জল সঞ্চয়ের পরিমাণে বেশি হওয়ায় জলস্তর অবনমিত হচ্ছে।

২) পানীয় জলের সংকট :


    মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস হল ভৌম জল। ভৌম জলের অতিরিক্ত ব্যবহার হেতু সমগ্র বিশ্বে পানীয় জলের সংকট দেখা দিচ্ছে। ভারতের সবথেকে বেশি যেসব রাজ্য বা অঞ্চলে এই প্রকোপ দেখা গিয়েছে সে গুলি হল রাজস্থান, চেন্নাই ইত্যাদি।

৩) ভূমির অবনমন :


    ভৌম জলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন স্থানে ভৌমজলের ভান্ডার কমে গিয়ে উপরের মাটি বসে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এতে ভূমিধসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি গবেষণা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভৌম জল তুলে নেওয়ার কারণে কলকাতা শহরের কিছু অংশ হঠাৎ করে মাটির তলায় বসে যেতে পারে।

৪) সেচের জলের অভাব :


    ভারত নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতের সেচ ব্যবস্থার অধিকাংশ-ই নলকূপ তথা ভূগর্ভস্থ জলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতের প্রায় ৬০.৯ শতাংশ জমিতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। ভৌম জলের সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনীয় সেচের জল পাওয়া যাবে না ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।

৫) মাটির লবণতা বৃদ্ধি :


    কূপ - নলকূপের জলে মাটির নিচের স্তর থেকে লবণ দ্রবীভূত হয়ে মাটির উপরের স্তরে এসে সঞ্চিত হয়। তাই ভৌম জল সেচ কাজে যত বেশি ব্যবহার করা হয় মাটির লবণতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

৬) রোগ সৃষ্টি :


    মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ জল তোলার ফলে ভৌম জলের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক যৌগ মিশে যাচ্ছে। আর্সেনিক, ফ্লুরাইড, নাইট্রেট ইত্যাদি বিভিন্ন খনিজ জলের সঙ্গে মিশিয়ে জলকে বিষাক্ত করে তুলছে। এইসব বিষাক্ত জলপান এর মানবদেহে বিভিন্ন জটিল রোগ এমনকি কান্সার সৃষ্টি হচ্ছে। আর্সেনিক দূষণের ফলে হাতের তালু, পায়ের তলায় কালো কালো ছোপ পড়ছে যাকে বলা হয় ব্ল্যাক ফুট রোগ। ফ্লুরাইড দূষণের ফলে দাঁত এবং হাড় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments